দেশে কিশোরীদের ৬৯% শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়

বিশেষ প্রতিনিধিঃ- ইমরান হোসেন ইমন ;- আমাদের দেশে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোরীদের মধ্যে শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তার হার ৬৯ শতাংশ। একই বয়সী কিশোরদের মধ্যে শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তার হার ৬৩ শতাংশ।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) প্রকাশিত শারীরিক সক্রিয়তা সংক্রান্ত প্রথম বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য হারে শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তার তথ্য রয়েছে।

১৮ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তার হার ১৬ শতাংশ, নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ৪০ শতাংশ। ৭০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ শারীরিকভাবে সক্রিয় নয়। ওই বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ৪৬ শতাংশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তার কারণে ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৫০ কোটি মানুষ হৃদরোগ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য অসংক্রামক রোগে ভুগবে।

সরকার যদি তাদের জনগণকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখতে জরুরি উদ্যোগ না নেয় তাহলে ওই রোগগুলোর জন্য প্রতিবছর দুই হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। প্রতিবেদনটিতে সব বয়সী ও সামর্থ্যের মানুষের শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি করতে সরকারের উদ্যোগগুলো মূল্যায়ন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ অসংক্রামক রোগে। বর্তমানে ১৭ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার নাগরিকের এই দেশে শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কিত অসংক্রামক রোগ ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রতিবছর ব্যয় হয় ছয় কোটি ১৭ লাখ আট হাজার ৬৫২ ডলার। ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এই ব্যয় দাঁড়াতে পারে ৬৭ কোটি ৮৭ লাখ ৯৫ হাজার ১৭৭ ডলারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিনে অন্তত এক ঘণ্টা শারীরিক কর্মকাণ্ড যেমন—হাঁটা, খেলাধুলা, সাইকেল চালানোর সুপারিশ করে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অর্ধেকেরও কম রাষ্ট্রে জাতীয় শারীরিক সক্রিয়তা নীতি আছে। সেগুলোর মধ্যে আবার ৪০ শতাংশেরও কম দেশে ওই নীতি কার্যকর হয়েছে। বিশ্বের মাত্র ৩০ শতাংশ দেশে সব বয়সীদের জন্য জাতীয় শারীরিক সক্রিয়তা নীতিমালা আছে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয়ভাবে শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কোনো প্রচারণা ও অনুষ্ঠান নেই এ দেশে। জনগণকে হাঁটাচলা ও সাইকেল চালানো উৎসাহিত করতে বাংলাদেশে জাতীয় নীতি নেই।

তবে এ দেশে গণপরিবহনসংক্রান্ত জাতীয় নীতি ও জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কৌশল আছে। কর্মক্ষেত্র, শিশুযত্ন স্থাপনা, জনসমাগমস্থলে এবং কমিউনিটি স্পোর্টস, সাইক্লিংয়ের মাধ্যমে শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য কোনো প্রচারণা নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় সব দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের শারীরিক সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা আছে। তবে ৭৫ শতাংশ দেশ কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের শারীরিক সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে বিশ্বের ৩০ শতাংশেরও কম দেশ।

প্রতিবেদনে খোলা জায়গা, হাঁটা ও সাইকেল চালানোর অবকাঠামো, স্কুলে খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্তে ঘাটতি পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিষয়ে ১১ বছরের কম বয়সীদের শারীরিক সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তার তথ্য দেখানো হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনের সারমর্ম অংশে বলা হয়েছে, নিয়মিত শারীরিক কর্মকাণ্ড শারীরিক, মানসিক—দুই ধরনের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সব বয়সী ও সামর্থ্যের মানুষের জন্য শারীরিক কর্মকাণ্ড লাভজনক। স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য অলস বা নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থাকা কমিয়ে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ শুরু করা উচিত।

বর্তমান বিশ্বের ৮১ শতাংশ কিশোর-কিশোরী ও ২৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রা অনুযায়ী শারীরিকভাবে সক্রিয় নন। এটি কেবল জীবনকালের ওপরই নয়, সমাজ ও অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলবে।

কভিড-১৯ মহামারি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত শারীরিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। একই সঙ্গে শারীরিকভাবে সক্রিয়তার দিক থেকে কিছু সম্প্রদায়ের পিছিয়ে থাকার বিষয়টিও এই মহামারির সময় ফুটে উঠেছে।

Next Post

পায়রা বন্দরসহ ৬ প্রকল্পের উদ্বোধন আজ

Sat Oct 29 , 2022
বিশেষ প্রতিনিধিঃ- ইমরান হোসেন ইমন ;- আজ বৃহস্পতিবার পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ আরও ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই উদ্যোগের ফলে, পায়রা বন্দরে ভালো সুযোগ-সুবিধার সুষ্ঠু কার্যক্রম নিশ্চিত করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান সরকারের উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা এসব উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে […]

You May Like