কক্সবাজার থেকে আসা হানিফ পরিবহনের বাসটি থেকে যাত্রী নামতেই তল্লাশি শুরু। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ভেঙে পড়েন চালক। বের করে দেন লুকিয়ে রাখা ইয়াবা। সুপারভাইজারের কাছেও মেলে একই মাদকের আরেকটি চালান।
জিজ্ঞাসাবাদে চালক সুমন জানান, ঢাকা-কক্সবাজার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে গাড়ি চালাতে চালাতেই অন্য পরিবহন কর্মীদের দেখাদেখি শুরু করেন ইয়াবা কারবার। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এলেই নিয়ে আসেন পাঁচ হাজার- দশ হাজার- বিশ হাজারের একেকটি চালান। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন সুপারভাইজারও।
হানিফ পরিবহনের বাস চালক সুমন বলেন, “ঢাকা পৌঁছানোর পর মোবাইল ফোনে একটা এসএমএস আসতো। সেই নম্বর থেকে কল দিলে আমি দিয়ে দিতাম। এক পিছে (ইয়াবা) ১০টাকা দেয়া হত। লোভে পড়ে আমি ভুল করে ফেলেছি। ভবিৎষতে আর এমন ভুল করবো না।”
সুপারভাইজার মেহেদী বলেন, “প্রথমে অফার পেয়ে আমি রাজি হইনি। দ্বিতীয়বার লোভের বসে রাজি হয়ে গেছি। ঢাকায় যে নম্বরটা আমাকে দিত তাকে মালটা আমি দিতাম, সে আমাকে টাকা দিত।”
পরিবহনের পাশাপাশি আরও বেশি লাভের আশায় খুচরা বিক্রিও শুরু করেন সুমন। ধানমন্ডি, কলাবাগানসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ছেলে-মেয়েদের কাছে একেকটি ইয়াবা বড়ি বিক্রি করেন আটশ টাকাতে। সুমনের হোয়াটস্যাপ পরীক্ষা করে মিলেছে ইয়াবা ক্রেতাদের তথ্যও।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তরা বিভাগ) বদরুজ্জামান জিল্লু বলেন, “টেকনাফ বা কক্সবাজার যে পরিবহনগুলো নিয়মিত যাতায়াত করে তাদের ক্ষেত্রেই এ ঘটনাগুলো ঘটছে। পরিবহনের যারা এদিকে যাতায়াত করেন তাদের মাধ্যমে এই চালনগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব। ”
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গেল তিন বছরে সারাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়েছে শতাধিক বাস চালক ও সুপারভাইজার। শুধু তাই-ই নয়, কক্সবাজারে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা বিভিন্ন পেশাজীবীদেরও একটি অংশ জড়িয়ে পড়ছে নিষিদ্ধ কারবারে।
মিয়ানমার সীমান্তে নিশ্ছিদ্র নজরদারি নিশ্চিত করতে না পারলে ইয়াবার গ্রাস ঠেকানো যাবে না বলে মনে করছে পুলিশ।